Friday, September 9

বাণিজ্যসক্ষমতায় এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

Alo (September 09, 2011)
বাণিজ্য প্রতিযোগিতাসক্ষমতায় এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। গতবারের চেয়ে ‘স্কোর’ বাড়লেও অন্য দেশগুলোর বাণিজ্যসক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি বাড়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। এবার ১৪২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮ নম্বরে, আর গতবার এ অবস্থান ছিল ১০৭ নম্বরে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০১১-১২ সালের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাসক্ষমতা প্রতিবেদন (জিসিআর) ও বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ সমীক্ষা ২০১০-এ বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ডব্লিউইএফের পক্ষে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
১০ কোটি টাকার চেয়ে বেশি সম্পদমূল্যের ৭০ জন ব্যবসায়ীর মতামত নিয়ে সিপিডি প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের সময়কাল ধরা হয়েছে।
সমীক্ষায় মতামত দেওয়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ব্যবসায় পরিবেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অবকাঠামো দুর্বলতা। বিশেষ করে, বিদ্যুৎ-সংকটই ব্যবসা-বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করছেন তাঁরা। ব্যবসায় সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে সুশাসনের অভাবকে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
ধানমন্ডির সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন দুটির মূল অংশ উপস্থাপন করেন সংস্থার জ্যেষ্ঠ গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। এ সময় বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের স্কোর বেড়েছে, কিন্তু অন্যরা আরও এগিয়েছে। তাই প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আমরা আশা করি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে। কিন্তু মতামত জরিপে তা আসছে না।’
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতাসক্ষমতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রধান প্রধান প্রতিবন্ধক সূচকের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা। এ ছাড়া দুর্নীতি সূচকটি আগের বছর তিন নম্বরে থাকলেও এবার তা দুই নম্বরে ওঠে এসেছে। এরপরই রয়েছে অদক্ষ জনপ্রশাসন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ব্যবসায় অর্থায়ন সূচক।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থা, রাজনীতিবিদদের আর্থিক অসততা এবং প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবিশেষ পক্ষপাতিত্ব, সরকারি অর্থের অপচয়, উচ্চ করহার ও শ্লথ কাস্টমস প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে মতামত দেওয়া ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন আনেনি। অর্থাৎ বিষয়গুলো সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি আগের মতোই নেতিবাচক রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১০ সালে উদ্যোক্তারা ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে স্বস্তিতে ছিলেন না। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ঋণপ্রাপ্তি আগের চেয়ে আরও কঠিন হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে কর প্রদানের ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেন বেড়েছে। দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বহির্বিশ্বসংক্রান্ত পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো: বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, জ্বালানিমূল্যের অস্থিরতা, বাণিজ্য বাধা, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়মূল্যে ওঠানামা ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপর্যাপ্ততা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারত ছাড়া বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ও প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। চীন ২৭ থেকে ২৬, মালয়েশিয়া ২৬ থেকে ২১, শ্রীলঙ্কা ৬২ থেকে ৫২, নেপাল ১৩০ থেকে ১২৫, পাকিস্তান ১২৩ থেকে ১১৮ ও কম্বোডিয়া ১০৯ থেকে ৯৭ নম্বরে উন্নীত হয়েছে। তবে ভারতের অবস্থান ৫১ থেকে পিছিয়ে ৫৬ নম্বরে নেমেছে।

No comments:

Post a Comment