Thursday, March 24

এমজেএলের তালিকাভুক্তি নিয়ে নতুন জটিলতা

Alo (March 24, 2011)

এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডের তালিকাভুক্তির অনুমোদন নিয়ে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তালিকাভুক্তির ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারের দর প্রস্তাবিত মূল্যের নিচে গেলে প্রাথমিক শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে—এই শর্তে গত মঙ্গলবার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু একই দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্তিকরণ সম্পর্কিত উপকমিটির বৈঠকে বলা হয়েছে, যে শর্তে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিতে বলা হচ্ছে, তা কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোম্পানি আইনের যে ধারার কথা উল্লেখ করে এ শর্ত দেওয়া হচ্ছে, তাতে শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাঁদের মতে, তালিকাভুক্তির পর শেয়ারের দাম প্রস্তাবিত দরের চেয়ে কমে গেলে পরিচালকদের তা কিনতে হবে বলে ইতিপূর্বে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, এ ক্ষেত্রে সেটাই বলবৎ রাখা উচিত। ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় আজ বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর তালিকাভুক্তিকরণ সম্পর্কিত উপকমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, এএমজেল বাংলাদেশ কোম্পানি আইনের ৫৭ এর ২(সি) ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। কিন্তু এ ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানির শেয়ার বা ডিবেঞ্চার ছাড়ার সময় যে ব্যয় অথবা প্রদত্ত কমিশন অথবা অনুমোদিত ডিসকাউন্ট তা অবলোপনের ক্ষেত্রে শেয়ার প্রিমিয়াম হিসাব ব্যবহার করা যেতে পেরে। এ ধারাটির কোথাও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করে ক্ষতিগ্রস্ত শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়নি। তাই এ শর্তে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হলে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠবে।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ খানও একই মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কোম্পানির প্রিমিয়ামের টাকা দিয়ে শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, এটা করতে হলে কোম্পানি আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, যদি শেয়ারের অতিমূল্যায়নের কারণে সাধারণ শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতেই হয়, তাহলে কোম্পানি কোনো ডিলার বা এজেন্সিকে কাজে লাগাতে পারে শেয়ার কেনার জন্য। যারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে শেয়ারের দাম কমে গেলে কিনে নেবে।
যোগাযোগ করা হলে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খোন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ শেয়ারধারীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনের ভুল ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এসইসি আইনি পরামর্শকের মতামত নেবে।
এমজেএল বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে ৬০৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এ জন্য প্রতিটি প্রাথমিক শেয়ারের দাম নেওয়া হয়েছে ১৫২ টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু বাজারে সাম্প্রতিক ধসের পর কোম্পানির শেয়ারের মূল্যায়ন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে। তীব্র সমালোচনার মুখে গত ২০ জানুয়ারি সরকার কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত করে। এক দিন পরই বিক্রির মূল্যের চেয়ে শেয়ারের দর কমে গেলে পরিচালকদের কিনতে হবে এ শর্তে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ শর্তে তালিকাভুক্তিতে শুরুতে রাজি হলেও পরে নানা জটিলতার কথা উল্লেখ করে কোম্পানির পক্ষ থেকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়। কিন্তু এসইসি রাজি না হলে পরে কোম্পানিটি এই বিকল্প প্রস্তাব দেয়। শেষ পর্যন্ত বিকল্প প্রস্তাবে রাজি হয়েছে এসইসি।
এদিকে এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেডও তালিকাভুক্তির জন্য একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ কোম্পানিটিও এএমজেল বাংলাদেশ লিমিটেডের মতো সাধারণ শেয়ারধারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
এএমজেল বাংলাদেশের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রাথমিক শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছেন এমন কেউ শেয়ার বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি ক্রয়মূল্যের চেয়ে বিক্রয়মূল্যে টাকার অঙ্কে যে পার্থক্যটুকু থাকবে সেই পরিমাণ টাকায় পাবেন। আর এ টাকা দেওয়া হবে কোম্পানি সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে যে প্রিমিয়াম নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডকে ৩১ মার্চের মধ্যেই তালিকাভুক্তির কথা। কারণ, অনিবাসী বিনিয়োগকারীদের প্রাথমিক শেয়ার (আইপিও) আবেদনের চাঁদা জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে।

No comments:

Post a Comment