Monday, October 11

পুঁজিবাজারে বিপর্যয় হলে রাজনৈতিক ইস্যু হবে?

Jano (October 11, 2010)

যৌক্তিক সংশোধন ছাড়াই ধারাবাহিক উর্ধগতির কারণে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ৬ মাসের ব্যবধানে তিন গুণ হয়েছে আর্থিক লেনদেন। একই সময়ের মধ্যে প্রায় ২ হাজার পয়েন্ট বেড়েছে সব সূচক। নানা উৎস থেকে স্রোতের মতো টাকা ঢুকলেও এর সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়েনি নতুন শেয়ারের যোগান। ফলে বাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ইতোমধ্যেই অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরপরও নানা ধরনের গুজব ও প্রলোভনের কারণে শেয়ার ধরে রাখছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। একের পর এক পদৰেপ নিয়েও বাজারের রাশ টানতে ব্যর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি।
এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে জমে ওঠা পুঁজি উৎপাদনমুখী খাতে স্থানান্তর করে শেয়ারের যোগান বাড়াতে না পারলে যে কোন সময় বড় ধরনের ধস নামতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। আর অনাকাঙ্ৰিত কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে শেষ পর্যন্ত তা রাজনৈতিক ইসু্যতে পরিণত হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই দুই স্টক এঙ্চেঞ্জের সভাপতি বলেছেন, শেয়ারবাজারে বিপর্যয় ঘটলে তার দায়ভার সরকারের ওপর গিয়ে পড়বে।
ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারে অধিকাংশ কোম্পানির পিই অনুপাত দ্রম্নত বেড়ে যাচ্ছে। অনেক কোম্পানির ৰেত্রেই এই উর্ধমুখী যাত্রা টেকসই হবে না। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয় আসবে। এর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি ৰতিগ্রসত্ম হবে দেশের শেয়ারবাজার। বড় ধসের কারণে একবার শেয়ারবাজারের সুনাম ৰুণ্ন হলে আগামী ৮-১০ বছরেও তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।
সিএসই সভাপতি ফখর উদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে বড় কোন বিপর্যয় ঘটলে শেষ পর্যনত্ম সরকারের ওপর তার দায় বর্তাবে। এ কারণে সময় থাকতেই সরকারকে প্রয়োজনীয় হসত্মৰেপ গ্রহণ করতে হবে।
নানা কারণে বেড়েছে বিনিয়োগ ॥ সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নানা মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে আসছেন। কালো টাকা সাদা করার শর্তহীন সুযোগ গ্রহণ করে গত অর্থবছরে অনেকেই বিপুল পরিমাণ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কারণ অন্যান্য খাতের চেয়ে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগে ঝামেলা কম, মুনাফার সুযোগ বেশি। ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ পুঁজিবাজারের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে পেনশনভোগী বিপুল সংখ্যক মানুষ সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আসছেন। কারণ গ্যাস-বিদু্যতসহ অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে বিনিয়োগে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় বড় উদ্যোক্তারাই এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। একই কারণে ব্যাংকিং খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল)'র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৬৭ থেকে বেড়ে গতকাল রবিবার পর্যনত্ম ২৯ লাখ ৪৬ হাজার ২৮৬টিতে দাঁড়িয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। ইতোমধ্যেই দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ২৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি শেয়ারের যোগান ॥ অর্থের প্রবাহ বাড়লেও সেই তুলনায় নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ছে না। এর বিপরীতে বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তীব্র হয়ে উঠেছে ভাল শেয়ারের সঙ্কট। চাহিদা ও যোগানের এই অসামঞ্জস্যতা কমাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে না পারলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে বলে বিশেস্নষকরা মনে করেন।
শেয়ারবাজারে ভাল শেয়ারের যোগান বাড়াতে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ৬ মাসের মধ্যে ২৬টি সরকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের নির্দেশ দেন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন প্রতিষ্ঠানই শেয়ারবাজারে আসতে পারেনি। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকারী বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দায়িত্ব দেয়া হয়। সামগ্রিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ২০ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি আনত্মঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ৬টি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার লৰ্য নির্ধারণ করে আইসিবিকে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে এসব কোম্পানির আর কোন অগ্রগতি নেই।
বাড়ছে বিনিয়োগ ঝুঁকি ॥ চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাল শেয়ার বাড়াতে না পারায় পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানির বাজার মূল্য ও আয়ের (পিই) অনুপাত ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে ডিএসইর তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির গড় পিই অনুপাত ছিল ২৪.৫৫। সর্বশেষ গত সপ্তাহে এই অনুপাত ২৬.৩৯-এ দাঁড়ায়। চলতি সপ্তাহে অধিকাংশ শেয়ারের দর যে হারে বেড়েছে তাতে পিই অনুপাত ইতোমধ্যেই ২৭ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধরে নেয়া যায়। আনত্মর্জাতিকভাবে শেয়ারবাজারের পিই অনুপাত ১৫-এর নিচে থাকলে তাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়। এর উপরে উঠলেই শেয়াবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেস্নষকরা মনে করেন।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে যে হারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে সেই তুলনায় নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এর ফলে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অনাকাঙ্ৰিত পরিস্থিতি এড়াতে এখনই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে নতুন নতুন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে।
ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে চাহিদা অনুযায়ী ভাল শেয়ারের সরবরাহ নেই। ফলে অনেক শেয়ারই অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।
কাজে আসেনি এসইসির প্রচেষ্টা ॥ অধিকাংশ শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে বড় ধস থেকে বিনিয়োগকারীদের রৰার লৰ্যে পুঁজিবাজারের লাগাম টেনে ধরতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। কিন্তু গত ১০ মাসে একের পর এক পদৰেপ নিয়েও বাজারের উর্ধগতি রোধে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। পুঁজির প্রবাহ কমিয়ে শেয়ারবাজারের পাগলা ঘোড়ার লাগাম টানতে কয়েক দফায় মার্জিন ঋণ সুবিধা সঙ্কোচন করেছে এসইসি। বাজার মূল্য ও কোম্পানির আয়ের (পিই) অনুপাত ৪০-এর বেশি হলে শেয়ারের বিপরীতে ঋণ সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজের ঋণ প্রদানের ৰমতাও কমানো হয়েছে। কিন্তু কোন পদৰেপই বাজারে প্রত্যাশিত মাত্রায় মূল্য সংশোধন হয়নি। সর্বশেষ বাজারের রাশ টানতে শেয়ারের বাজার মূল্য ও প্রকৃত সম্পদমূল্যের (এনএভি) ভিত্তিতে মার্জিন ঋণ নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েও সফল হয়নি এসইসির প্রচেষ্টা। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের কারণে কিছুদিন বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করলেও লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধির ধারায় তেমন ছেদ পড়েনি।
বিনিয়োগকারী এবং অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে পালস্না দিয়ে ভাল শেয়ারের যোগান না বাড়ার কারণেই শেয়ারের দর ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেস্নষকরা। দরবৃদ্ধির এই হার কোম্পানির আয় বৃদ্ধির চেয়ে বেশি হওয়ায় বাড়ছে শেয়ারের পিই অনুপাত_ যা বাজারকে ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোকেই সবচেয়ে বড় সমাধান বলে মনে করছেন বিশেস্নষকরা।
চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জের (সিএসই) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বর্তমানে এলায়েন্স ক্যাপিটাল এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়ালি-উল-মারম্নফ মতিন জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাভাবিক সংশোধন ছাড়াই শেয়ারবাজারের উর্ধমুখী প্রবণতার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যত নিয়ে এক রকম শঙ্কা তৈরি করছে। বাজারে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক শেয়ারের দর অতি মূল্যায়িত। শেয়ারের মূল্য ও আয়ের (পিই) অনুপাত অনেক বেড়ে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে এসইসি ঋণ সঙ্কোচনসহ নানা পদৰেপ নিলেও তার কোন প্রভাব লৰ্য করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তিনি শেয়ার লেনদেনের ৰেত্রে বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিপর্যয় হলে দায় সরকারের? ॥ বিপুল চাহিদার বিপরীতে ভাল শেয়ারের যোগান বাড়াতে না পারলে শেয়ারবাজারে জমে ওঠা বুদ্বুদ যে কোন সময় ফেটে যেতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশেস্নষকরা। তাঁরা মনে করেন, স্বাভাবিক সংশোধন ছাড়াই শেয়ারের দর ও সূচক বাড়তে থাকলে এক সময় বিনিয়োগকারীসহ সবাই ৰতিগ্রসত্ম হবেন_ যা দেশের পুঁজিবাজারের জন্য বড় ধরনের অমঙ্গল বয়ে আনবে। আর পুঁজিবাজারে বড় কোন বিপর্যয় ঘটলে তা শেষ পর্যনত্ম রাজনৈতিক ইসু্যতে পরিণত হবে_ যা বর্তমান সরকারের জন্য বড় ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, নীতিনির্ধারকরা যথাযথ মনোযোগ না দিলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পুঁজিবাজারে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। শেয়ারবাজারে পরিকল্পিতভাবে ধস নামিয়ে ১৯৯৬ সালের মতো রাজনৈতিক ইসু্য সৃষ্টি করা হতে পারে। দুই স্টক এঙ্চেঞ্জে বিএনপি-জামাতপন্থীদের আধিপত্য থাকায় খুব সহজেই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে ঢাকা স্টক এঙ্চেঞ্জে (ডিএসই) বিগত জোট সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের নামে-বেনামে অনেক সদস্যপদ দেয়া হয়েছিল। বিএনপির নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের অনেকেরই ব্রোকারেজ হাউস রয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত বেশ কয়েক জন নেতাও রয়েছেন।
পুঁজিবাজার বিশেস্নষকরা মনে করেন, বর্তমান সরকারের আমলে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এখানে বিপুলসংখ্যক বেকারের কর্মকসংস্থান হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে বড় আকারের মূলধন যোগান দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুরো পরিস্থিতিকে দৰতার সঙ্গে কাজে লাগাতে না পারলে তা সরকারের জন্য দুশ্চিনত্মার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারের ভাবমূর্তি ৰুণ্ন করতে পরিকল্পিতভাবে পুঁজিবাজারে ধস নামানোর প্রচেষ্টাও অস্বাভাবিক নয়। এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
উলেস্নখ্য, বর্তমান সরকার ৰমতা গ্রহণের পর থেকেই ১৯৯৬ সালের অনাকাঙ্ৰিত পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি এড়াতে পুঁজিবাজারের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে আসছে। অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও সব রকম নেতিবাচক প্রবণতা বন্ধ করে দেশের পুঁজিবাজারকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ কোন মহল যাতে পরিকল্পিতভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুটে নিতে না পারে_ সে বিষয়ে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বৰণিকভাবে এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে। জুয়াড়ি চক্রের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি চিহ্নিত করেছে তারা। ইতোমধ্যেই এদের দু'একজনের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এসইসি। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রণালয় ও এসইসিকে বিভ্রান্ত করে শেয়ারবাজারে ছোট-খাটো অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে সরকার ॥ বিশেস্নষণে দেখা গেছে, ১৯৯৬ সালের বড় ধসের পর শেয়ারবাজার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ব্যাপক নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছিল। ওই সময়ে পুঁজি হারানো হাজার হাজার মানুষের মধ্যে শেয়ারবাজার ছিল বড় আতঙ্কের নাম। '৯৬-এ পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও নতুন করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের চিনত্মা আসেনি। ফলে হাতেগোনা কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে শেয়ারবাজারের লেনদেন। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর আবারও শেয়ারবাজারের বিনিয়োগে স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শেয়ারবাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তাতে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম ভাল কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার এটাই উপযুক্ত সময়। একইসঙ্গে লাভজনক বিদেশী কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে পদৰেপ নেয়া প্রয়োজন। এতে একদিকে যেমন পুঁজিবাজারে ভাল শেয়ারের সঙ্কট কাটবে, তেমনি সবধরনের বিনিয়োগকারীর জন্য পুঁজি বিনিয়োগের দরজাও প্রসারিত হবে।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে বৈদিশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শেয়ারবাজারকে কাজে লাগানোর বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজারে জমে ওঠা বিপুল পরিমাণ মূলধন থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জ্বালানি, বিদু্যত, রেল, সেতুসহ বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করা সম্ভব। ঋণদাতাদের কঠিন শর্তযুক্ত ঋণের পরিবর্তে এ খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হলে একদিকে জাতীয় অর্থনীতিতে বিদেশ-নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে বছর বছর ঋণের সুদ ও আসল হিসেবে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে। অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে এই মুহূর্তে কমপৰে ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব বলে সংশিস্নষ্টরা মনে করেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শক্তিশালী পুঁজিবাজারকে দেশের উৎপাদনমুখী খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতির বিকাশে কীভাবে কাজে লাগানো যায়_ সরকারের দিক থেকে সে ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এজন্য বিদু্যত, গ্যাসসহ অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং শিল্প খাতকে শক্তিশালী করতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সরবরাহের প্রক্রিয়া গতিশীল করতে হবে। এৰেত্রে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারলে একদিকে যেমন জাতীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে_ তেমনি পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা বাড়বে।

No comments:

Post a Comment